ঢাকা, মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্থায় দেশজুড়ে তোলপাড়


খবর   প্রকাশিত:  ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:১৫ পিএম

মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্থায় দেশজুড়ে তোলপাড়
নিজস্ব প্রতিবেদক: গলায় জুতার মালা পরিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছনার ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন বর্তমান অন্তরবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দও এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রোববার রাতে লাঞ্ছনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে। মানুষের মাঝে তৈরি হয় ব্যাপক সমালোচনা। মুক্তিযোদ্ধাকে এ লাঞ্ছনার সমালোচনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রচার হতে দেখা গেছে বিদেশি গণমাধ্যমেও।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৯টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। তার ছেলের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামীলীগের সংসদ সদ্যসের সাথে বিবাদ থাকায় কৃষকলীগ নেতা হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামীলীগ সরকার থাকাকালীন সময়ে তিনি এলাকায় যেতে পারেননি। এসব বিষয় নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছনার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। সোমবার রাতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়- হেনস্থার সময় ঘটনাস্থলে থাকায় জামাতের দুই সমর্থককে প্রাথমিকভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সোমবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর আমীর মু. মাহফুজুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনা করার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পৃক্ততা নেই। তারপরেও ঘটনাস্থলে থাকায় আমাদের দুজন সমর্থককে প্রাথমিকভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় । কোন মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান বা লাঞ্ছনার পক্ষে আমরা নয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। তবে এ ঘটনায় সোমবার রাত পর্যন্ত চৌদ্দগ্রাম থানায় কোন ধরনের অভিযোগ বা মামলা দায়ের করেননি লাঞ্ছনার শিকার মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার।
তবে অভিযুক্তদের গ্ৰেফতারের বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তারুজ্জামান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু কিংবা তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন মামলা না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদেরকে সনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সদস্যরা মাঠে তৎপর রয়েছেন। এদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে হেনস্থার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলে জানিয়েছে কুমিল্লা জেলা পুলিশ। ঘটনার পর থেকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। তিনি মানসিক ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ রয়েছেন, তবে নিরাপদ রয়েছেন। তবে যারা এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন আমরা তাদের শনাক্ত করতে করেছি এবং আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে। হেনস্থার ঘটনার পর থেকে আবদুল হাই কানু ফেণীতে তার সন্তানের বাড়িতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। রবিবার দুপুরে হেনস্থার পর নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিকেলে গোপনে ফেনীতে মেয়ের বাড়িতে চলে যান তিনি।
জামায়াতের নিন্দা, ২ সমর্থক বহিষ্কার:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আমীর এড. মু. শাহজাহান, জেলা সেক্রেটারি ড. সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আমীর মু. মাহফুজুর রহমান ও উপজেলা সেক্রেটারি মু. বেলাল হোসাইন ২৩ ডিসেম্বর প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, “দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্চনার ঘটনার প্রতি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। আমরা এই দুঃখজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
যুক্ত বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। জামায়াতে ইসলামী শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়, দেশের সাধারণ কোনো নাগরিককেও হেনস্তা করা সমর্থন করে না। এই দুঃখজনক ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য আমরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
তারা বলেন, এই ঘটনার সাথে জড়িতরা জামায়াতে ইসলামীর কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মী নয়। জামায়াতে ইসলামীর কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মী আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই সমর্থন করে না এবং প্রশ্রয় দেয় না। আমরা স্থানীয়ভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি যে, জনাব আবদুল হাই কানু তার নিজ এলাকায় হত্যা মামলাসহ ৯টি মামলার আসামী। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। আমরা ঘটনার সাথে জড়িত ঢাকায় অবস্থানকারী আবুল হাশেম ও দুবাই ফেরত অহিদুর রহমানের শাস্তি দাবি করছি এবং কোনো অবস্থাতেই দেশবাসীকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, আমরা মু. আবুল হাশেম, পিতা-মৃত আবদুল বারেক, সাং-কুলিয়ারা এবং মু. ওহিদুর রহমান, পিতা-মৃত শফিকুর রহমান, সাং-কুলিয়ারা সহ এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের শাস্তি দাবি করছি এবং জামায়াতে ইসলামীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও ভাব-মর্যাদার ক্ষুণ্ন করায় সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিষ্কার ঘোষণা করছি।
নিন্দা:
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনি কুমিল্লার আহব্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুল ইসলাম চৌধুরী জুয়েল, সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড:গোলাম ফারুক। ঐক্য ন্যাপ কুমিল্লা দ: সাধারন সম্পাদক বশির আহমেদ, সাবেক ছাত্র নেতা মো:দেলোয়ার হোসেন টুটুল। চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধার উপর বর্বরোচিত হামলার তিব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাস করেছেন। হামলা কারিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃস্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি করেন।