বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ এখন একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। একটা ফ্যাসিবাদ দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, পার্লামেন্ট, প্রশাসন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে কেউ ভোট দিতে পারেনি। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীদল লাকসাম উপজেলা, লাকসাম পৌরসভা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে লাকসাম স্টেডিয়ামে এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
লাকসাম উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি কুমিল্লা বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কর্ণেল (অব:) এম আনোয়ারুল আজিম। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভোটের আগের রাতে সিল মেরে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে এই ফ্যাসিবাদি সরকার। ডামি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগই ছিল। এর আগে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদন্দ্বীতায় এমপি বানিয়েছে তারা।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে শেখ হাসিনাকে সরিয়েছি। তাই আসুন সবাই মিলে দেশটাকে গড়ি। দেশ গড়ার জন্য ঐক্যের বিকল্প নেই। আমাদের মাঝে কোন বিভেদ সৃষ্টি করবেন না। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করছি করবো। এ সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে। আমরাও সংস্কার চাই। তবে এ দেশের মানুষ সংস্কার বুঝে না। তারা বুঝে মোটা চাল আর মোটা কাপড়। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন । আর কালক্ষেপণ নয় আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যাবো। দেশের উন্নয়ন ও শৃঙ্খলার জন্য একটি স্থিতিশীল সরকার জরুরি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে লাকসাম- মনোহরগঞ্জের মানুষ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম একজন অত্যাচারী হিসেবে লাকসাম মনোহারগঞ্জে পরিচিত ছিলেন। তিনি সমাবেশকে প্রশ্ন করে বলেন এখন তিনি কোথায়। এখন কোথায় তার নেতা শেখ হাসিনা। লাকসামে হিরু-হমায়ন গুম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাইফুল ইসলাম হিরুর ছেলে রাফসান ইসলাম ও হুমায়ন পারভেজের ছেলে শাহরিয়ার কবির রাতুলসহ তাদের পরিবার এখনো তাদের অপেক্ষায় চোখের পানি ফেলছেন। হিরু-হুমায়ন গুমের সময় তারা তখন ছোট শিশু ছিলো। তাদের মায়ের সাথে যখন এই ছোট শিশুরা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে যায় তখন তাদের কথা শুনে আমার চোখের পানি ঝরেছে। তারা এখনো মনে করে তাদের পিতা ফিরে আসবে তাদের মাথায় হাত বোলাবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন ৭১ কে কটাক্ষ করে কেউ কথা বলবেন না।
বেলা ৩টা বিশ মিনিটে বিএনপি মহাসচিব সভা-মঞ্চে উপস্থিত হলে জনাকীর্ণ লাকসাম স্টেডিয়াম মাঠে লাখো জনতা হাত নেড়ে মহাসচিবকে অভিবাদন জানান। দুপুর বারোটার পর সমাবেশস্থল বিএনপি নেতা-কর্মীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে। সমাবেশ উপলক্ষে সকাল ১০টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে পার্শ্ববর্তী মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা থেকে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। সমাবেশস্থলের বাহিরে সড়ক, বিভিন্ন ভবনের বারান্দা ও ছাদে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ বক্তব্য শোনেন।
জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন, বিএনপি কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহবায়ক উত্বাতুল বারী আবু, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম -আহবায়ক এম কফিল উদ্দিন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম। অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আমিরুজ্জামান আমির, মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহ সুলতান খোকন, লাকসাম উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুর রহমান বাদল, মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইলিয়াছ পাটোয়ারী, লাকসাম পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক আবুল হাশেম মানু, লাকসাম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ডা. নুর উল্ল্যা রায়হান, লাকসাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মজির আহমেদ, বিএনপি নেতা ফজলে রহমান চৌধুরী আয়াজ, গুম পরিবারের সন্তান শাহরিয়ার কবির রাতুল, রাফসানুল ইসলাম। যৌথভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক সরওয়ার জাহান ভূঁইয়া দোলন, বিএপি নেতা শাহআলম, মনির আহমেদ, মোশাররফ হোসেন মুশু।